নির্মাণ খাতকে আমূল বদলে দেয়া প্রযুক্তিসমূহ
বাংলাদেশে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে শত শত বছরের পুরনো প্রযুক্তিই ব্যবহার হয়ে আসছে বেশি। সারা বিশ্ব যেখানে ঝাঁ-চকচকে প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করে চলেছে অভাবনীয় সব কাঠামো, সেখানে আমাদের পিছিয়ে থাকা সত্যিই বেমানান। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তাই অ্যাসিউর গ্রুপ কাজ করছে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তিগুলো নিয়ে। চলুন বর্তমান বিশ্বে ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগুলো এক নজরে দেখে নেই।
থ্রিডি কনস্ট্রাকশন
থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যাপারটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে। ছোট পরিসরের পাশাপাশি নির্মাণের মতো বড় পরিসরেও তা সাফল্যের সাথে ব্যবহার হচ্ছে। মূলত থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে থ্রিডি প্রিন্ট করা বিল্ডিং ইউনিট নির্মাণের স্থানে নিয়ে খুব দ্রুতই কাঠামোটি দাঁড় করিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। এমনকি নির্মাণের স্থানেও থ্রিডি প্রিন্টিং করে কাজ এগিয়ে নেওয়া যায়। এতে সাপ্লাই চেইনের খরচ এবং প্রজেক্টের সার্বিক খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়, সময়ও কম খরচ হয়।
অগমেন্টেড রিয়ালিটি
অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) এর পাশাপাশি বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (বিআইএম) এর ব্যবহার করে ডেভেলপাররা আগে থেকেই দেখে নিতে পারেন নির্মাণের পর একটি কনস্ট্রাকশন প্রজেক্ট দেখতে কেমন হতে পারে। এতে তো পরিকল্পনা গুছিয়ে আনতে সুবিধা হয়ই, এর পাশপাশি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট, ইউটিলিটি ম্যানেজমেন্ট, ট্রাফিক রুটিং এসব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি আনা সম্ভব।
প্রিকাস্ট ফ্ল্যাট প্যানেল মডিউলস
এই প্রযুক্তিতে দেয়াল ও মেঝে নির্মাণে চ্যাপ্টা আকারের মডিউল তৈরি করে তাকে নির্মাণ স্থানে নিয়ে ব্যবহার করা হয়। একই আকার-আকৃতির মডিউলগুলো ব্যবহারে নির্মাণের কাজটা সহজ হয়, এছাড়া সময় বেঁচে যায় অনেকগুণ। এই প্রযুক্তিটি ক্রস-ওয়াল কনস্ট্রাকশন নামেও পরিচিত।
থিন জয়েন্ট মেসনরি টেকনিক
এই প্রযুক্তিটি খুব নজরকাড়া কিছু নয় বটে, কিন্তু নির্মাণ খাতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। চিরায়ত পদ্ধতিতে ১০ মিলিমিটার করে চুন-সুরকি বা মর্টার ব্যবহার করা হয়, কিন্তু নতুন এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় ৩ মিলিমিটারেরও কম। এতে কম পরিমাণে মর্টার ব্যবহারে কম সময়ে কাজ শেষ করে ফেলা যায়। এই পদ্ধতিতে বড় আকারের কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করা হয়, এতে খরচ হয় কম। আর কুইক-সেট অ্যাডহেসিভ ব্যবহারে মর্টার দ্রুত শুকিয়ে যায় বলে এতে কাঠামোর শক্তিও বজায় থাকে।
রেইজড অ্যাকসেস ফ্লোরিং
আধুনিক জীবনযাত্রাকে সহজ করে তুলতে নির্মাণ প্রযুক্তিতেও নিশ্চিতভাবেই পরিবর্তন এসেছে। যেহেতু আবাসিক ও বাণিজ্যিক সব ধরণের ভবনেই এখন বেশ বড় পরিমাণে তারের চলাচল নিশ্চিত করতে হয়, তাই এসব তার নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেইজড অ্যাকসেস ফ্লোরিং ব্যবহার করা যায়।
এ পদ্ধতিতে মেঝের নিচে দিয়ে তার নিয়ে যাওয়া হয়। ভবনের প্রয়োজন, স্থান সংকুলান এবং তারের চলাচল বিবেচনা করে বেশ কয়েক ধরণের রেইজড অ্যাকসেস ফ্লোরিং বেছে নেওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতিটি অন্যান্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের রাস্তাও পরিষ্কার করে দেয়। যেমন এর মাধ্যমে মেঝের নিচে দিয়ে এয়ার ডিসট্রিবিউশন করানো সম্ভব। এতে ভবনের বাতাস চলাচল সহজ হয়, বিদ্যুতের খরচও কম হয়।
ইনস্যুলেটিং কনক্রিট ফর্মওয়ার্ক (আইসিএফ) টেকনিক
এই পদ্ধতিতে দেয়াল নির্মাণের জন্য পলিস্টাইরিনের ব্লক ব্যবহার করা হয়। এসব ব্লকের দুইটি অংশের মাঝে ফাঁপা অংশ থাকে এবং খুব দ্রুত এগুলো ব্যবহার করে দেয়াল তুলে ফেলা যায়। এরপর এই ফাঁপা দেয়ালের মাঝে পাম্প করে দেওয়া হয় উচ্চ মানের রেডি মিক্স, ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা কংক্রিট। এভাবে নির্মাণ করা ভবন শব্দনিরোধী এবং একই সাথে তাপ অপরিবাহী হয়, যা খুব বেশি গরম ও শীতের সময়ে আরামদায়ক।