জমি কেনার আগে যে পাঁচটি বিষয় জানা প্রয়োজন

জমি কেনার সময় সতর্ক না থাকলে বিপত্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা এবং নানা ধরনের জালিয়াতির শিকার হওয়ার ঘটনাও প্রায়শই ঘটে। জমি কেনার আগে যে পাঁচটি বিষয় জানা প্রয়োজন, এ বিষয়গুলো জেনে জমি বা ভূমি কিনলে প্রতারণা ও জটিলতার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ভূমি সংক্রান্ত কয়েকটি সরকারি অফিসের তথ্য এবং অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো, জমি কেনার আগে যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই।

জমি কেনার আগে যে পাঁচটি বিষয় জানা প্রয়োজন

জমি ক্রয়ে জটিলতা এড়াতে যে ৫টি বিষয় যাচাই করা জরুরি

জমি কেনার আগে যে পাঁচটি বিষয় জানা প্রয়োজন সেগুলো হলো:

  • ১. দলিল ও কাগজপত্র যাচাই: জমি কেনার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মালিকানার প্রমাণ সংক্রান্ত দলিল ও কাগজপত্র যাচাই করে নেওয়া। এজন্য বিক্রেতা থেকে দলিল, খতিয়ান এবং পর্চার ফটোকপি নিয়ে তহশিল বা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার ও এসিল্যান্ডের অফিসে গিয়ে এগুলোর সঠিকতা যাচাই করা। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহযোগিতা নেওয়া।
  • ২. অনুমতিপত্র: জমি রাজউকের আওতাভুক্ত থাকলে সেটি বিক্রি করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির অনুমতিপত্র নিতে হয়। বিক্রেতার কাছে রাজউকের এই অনুমতিপত্র আছে কিনা জমি কেনার আগে সেটি যাচাই করা। রাজউক ছাড়াও জমি গণপূর্ত, বিভিন্ন সোসাইটি ও ব্যক্তির অধীনে থাকতে পারে। জমিটি কার অধীনে আছে তা যাচাই করে নেওয়া । যদি জমি ব্যক্তিমালিকানায় থাকে তাহলে কোনো অনুমতিপত্রের প্রয়োজন নেই।
  • ৩. সরেজমিন অবস্থা: যাচাই করার পর কাগজপত্র সঠিক প্রমাণিত হলে সরেজমিনে গিয়ে জমির অবস্থা দেখা। কাগজে যেমন উল্লেখ আছে জমিতে তার থেকে কম-বেশি আছে কিনা বা সরকার এটি অধিগ্রহণ করেছে কিনা ইত্যাদি যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বললে জমিতে কোনো সমস্যা থাকলে বেরিয়ে আসবে। জমির কাগজপত্র ও সরেজমিনে যাচাই উভয় ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করা নেওয়া ভালো।
  • ৪. খাজনার কপি ও দখল:

    দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নিয়মিত জমির খাজনা পরিশোধ করতে হয় এবং এটির হালনাগাদ কপি মালিকের কাছেই থাকে। যার কাছ থেকে জমি কিনবেন তার জমির খাজনা নিয়মিত পরিশোধ হয়েছে কিনা তা যাচাই করা।

    জমির দখল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলিলপত্রে যে পরিমাণ জমি দেখানো হয়, দখলে নিতে গেলে অনেক সময় সে পরিমাণ পাওয়া যায় না। এ কারণে জমি কেনার সময় মালিকের কাছ থেকে দখলও বুঝে নেওয়া।

  • ৫. উত্তরাধিকার ও মর্টগেজ:

    বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়ে থাকলে তার নামে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে কিনা সেটি যাচাই করা। বিক্রেতার একাধিক ভাইবোন থাকলে সঠিক বন্টন অনুযায়ী তিনি এই জমির মালিক হয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা। কারণ বন্টননামা না হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে এই জমি নিয়ে ঝামেলা তৈরি হতে পারে।

    জমিটি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ (বন্ধক) রাখা হয়েছে কিনা খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গেলে খুব সহজে এ ব্যাপারে তথ্য পেয়ে যাবেন।

অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন

উপরে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে জমি কেনার আগে সেগুলো যাচাই করার পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়:

  • মূল মালিকের সাথে যোগাযোগ: অনেক সময় পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে জমি ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। এ ক্ষেত্রে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সহায়তা নিয়ে মূল মালিকের সাথে যোগাযোগ করে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ অনেকেই ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে জমি বিক্রি করেন। ফলে কিছুটা কম দামে জমি পাওয়া গেলেও সর্বস্বান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। এজন্য জমি কেনার আগে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
  • অপ্রাপ্ত বয়স্কের জমি: জমির মালিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে তার বৈধ অথবা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবকের সাথে জমি কেনার ব্যাপারে আলোচনা করে নেওয়া প্রয়োজন। এটি বিক্রয়ের ক্ষমতা অভিভাবকের আছে কিনা সেটিও যাচাই করে নেওয়া।
  • খাস বা সরকারি জমি: খাস বা সরকারি জমি বিধিবহির্ভূতভাবে কেনা-বেচা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কেনার আগে এটি সরকারি বা খাস জমি কিনা তা যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।
  • বিক্রয় চুক্তি বা বায়নাপত্র রেজিস্ট্রি: অন্য কোনো পক্ষের সাথে বায়নাপত্র বা বিক্রয় চুক্তি রেজিস্ট্রি করা আছে কিনা খোঁজ নিন। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুযায়ী এক পক্ষের সাথে বায়নাপত্র বলবৎ থাকাকালে অন্য পক্ষের কাছে জমি হস্তান্তর করা যাবে না।
  • অভিজ্ঞ দলিল লেখকের সহযোগিতা: রেজিস্ট্রির জন্য দলিল দাখিলের পূর্বে সেটি ভালোভাবে পড়ে নিন। দলিলের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বারবার পড়ে নিশ্চিত হোন যে সেটি নির্দিষ্ট ফরমেটে যথাযথ বিধি অনুযায়ী লেখা হয়েছে কিনা। একজন অভিজ্ঞ দলিল লেখকের সহযোগিতা নেওয়া ভালো।

জমি কেনার সময় করণীয়

জমি কেনার সময় কিছু বিষয়ে ক্রেতাকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হয়:

  • জমি কেনার সময় প্রথমেই দলিল প্রস্তুত করা
  • দলিল চূড়ান্ত হলে মিউটেশন বা নামজারির জন্য আবেদন করা
  • ব্যাংকের মাধ্যমে জমির মূল্য পরিশোধ করা
  • হাতে হাতে লেনদেন করতে হলে সাক্ষীর উপস্থিতিতে লেনদেন করা
জমি কেনার সময় করণীয়

জমি কেনার পর যা করবেন

জমি কেনার পর মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য যে কাজগুলো করতে হয়:

  • আমিন ডেকে সীমানা পরিমাপ করে আগের মালিক থেকে জমির দখল বুঝে নেওয়া
  • মূল দলিল পেতে দেরি হলে মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করা
  • দলিলের নকল কপি দিয়ে ভূমি অফিসে নিজের নামে নামজারি/খারিজ (মিউটেশন) করা (ইতিমধ্যে জমি রেজিস্ট্রেশন করার ৮ দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হওয়ার বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে)
  • প্রতিবছর খাজনা পরিশোধ করা
  • দখল প্রতিষ্ঠার জন্য চাষাবাদ বা বাড়িঘর নির্মাণ করা

সারসংক্ষেপ

অ্যাশিউর গ্রুপ বাংলাদেশর স্বনামধন্য রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। নিষ্কন্টক জমিতে অত্যাধুনিক সুবিধায় ভরপুর অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে থাকে এই কোম্পানি। আপনি কি ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে আজই এই কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন এবং বেছে নিন আপনার পছন্দের ফ্ল্যাট

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরসমূহ

জমি রেজিস্ট্রেশন করতে নিচে উল্লিখিত কাগজগুলো প্রয়োজন:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র/NID এর মূল ও ফটোকপি
  • TIN সার্টিফিকেট এর মূল ও ফটোকপি
  • দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর এবং তাদের NID/পাসপোর্টের মূল ও ফটোকপি
  • স্কেচসহ জমির ম্যাপ
  • স্ট্যাম্প (নির্ধারিত মূল্যের)
  • রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হার অনুযায়ী
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জমির মালিকের পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নম্বর ও জমির বিস্তারিত দিয়ে আবেদন করতে হয়। জমির মৌজা, জেলা, দাগ নম্বর ও পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়। দলিলের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হয়।
জমির নামজারি করা না থাকলে একাধিক বিক্রয়ের আশঙ্কা থাকে। মালিকের অবর্তমানে উত্তরাধিকারগণ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারে। বর্তমানে যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে গেলে নামজারি করা না থাকলে জমি বন্ধক নেওয়া হয় না।
সাধারণত একটি জমির নামজারি প্রক্রিয়া ২৮দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। তবে নানান কারণে এ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়। তাই নামজারি করার আগে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
জমির দলিলের সার্টিফাইড বা নকল কপি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং জেলা রেজিস্ট্রি বা সদর রেকর্ড রুম অফিসে পাওয়া যায়।