ঢাকার সেরা আবাসিক এলাকা
খান সাহেব একজন চাকুরিজীবী যিনি একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে একা থাকেন। তবে ইদানীং তিনি তিনি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় আনার বিষয়ে খুব চিন্তিত। তিনি এখন যে এলাকায় আছেন তা তাঁর পরিবারের বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়। তিনি মধ্যবিত্ত এবং তার বাজেট সীমিত তাই তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যে সাধ্যের মধ্যে কোন আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকাটা তার জন্য সুবিধাজনক হবে।
কামরুল ইসলাম একজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী। কিছুদিন ধরে তার শরীর ভালো নেই। ডাক্তার তাকে পরামর্শ দিয়েছেন যে তিনি এখন যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানে আর না থাকতে। কারণ সেখানে শোরগোল অনেক বেশি এবং তার পক্ষে হাঁটাচলা করা কিংবা বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করা সম্ভব না। তাই কামরুল ইসলাম একটি সুরক্ষিত আবাসিক এলাকা খুঁজছেন যা বসবাসের জন্য সেরা।
জনাব খান ও কামরুল ইসলামের মতো আমাদেরও বসবাসের জন্য উপযুক্ত এলাকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাজেট, সুরক্ষা, যোগাযোগের মতো বেশ কিছু দিক ভেবে দেখতে হয়। ঢাকা আমাদের দেশের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এখানে আবাসিক এলাকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক বিকল্প পাওয়া সম্ভব।
আপনি যদি আপনার উপযুক্ত আবাসিক এলাকাটি খুঁজে নিতে সমস্যায় পড়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আশা করি, এটি পড়ার পর আবাসিক এলাকা নিয়ে আপনার সমস্ত বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে।
রিহ্যাবের মতে, উত্তরা, বসুন্ধরা, বনশ্রী, বনানী এবং বারিধারা হল ঢাকার সেরা পাঁচটি আবাসিক এলাকা। এছাড়া আরও কিছু জায়গা রয়েছে যেমনঃ মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ইত্যাদি। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন এলাকাটি আপনার বসবাসের জন্য সবচেয়ে ভাল!
বসুন্ধরা- এক প্রশান্তিময় পরিবেশ
আপনি যদি সমস্ত প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশে থাকতে চান, তাহলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আপনার জন্য উপযুক্ত। তবে জায়গাটি ব্যয়বহুল। তাই এখানে একটি বাড়ি পেতে হলে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ আপনাকে খরচ করতে হবে।
বসুন্ধরায় আপনি পাবেনঃ
- নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা
- পর্যাপ্ত খোলামেলা জায়গা এবং সবুজের সমারোহ
- দেশের সবচেয়ে বড় শপিং কমপ্লেক্স
- নিকটস্থ অন্যতম সেরা চিকিৎসা সুবিধা; অ্যাপোলো হাসপাতাল
- এনএসইউ, আইইউবি, এআইইউবি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এবং কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
উত্তরা- এ যেন শহরের ভিতরে শহর!
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতে পারছেন না কিন্তু একটি শান্ত ও নির্মল এলাকা চান? চিন্তার কারণ নেই, আপনার জন্য আছে উত্তরা। এটি যেন শহরের ভেতরে আর একটি শহর! মূল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে উত্তরার বাসিন্দাদের হাতের নাগালের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা যেমন আছে তেমনি আছে প্রশান্তিময় জীবনযাপনের সুযোগ।
উত্তরার সুবিধাগুলোঃ
- সুন্দর এবং শান্ত আবাসিক অঞ্চল
- মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী
- বড় শপিংমল, বিখ্যাত ফুড কোর্ট এবং নিকটস্থ মেডিকেল সুবিধা
- স্কলাস্টিক, মাস্টারমাইন্ড, আগা খান ইন্তারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়।
বনানী- কর্মক্ষেত্র এবং বাড়ি যেখানে একেবারেই কাছাকাছি
প্রধান কর্পোরেট অফিসগুলি বেশিরভাগই বনানী এবং গুলশানে অবস্থিত। আপনি যদি সময় বাঁচাতে ও কর্মক্ষেত্রের কাছে থাকতে চান এবং সাথে পেতে চান প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগসুবিধা, তবে বনানী আপনার জন্য উপযুক্ত জায়গা।
বনানীতে আপনি পাচ্ছেনঃ
- গুলশানের পাশের এলাকায় থাকার সুযোগ
- বাণিজ্যিক এলাকার পাশাপাশি আবাসিক এলাকা
- সুরক্ষিত এলাকা
- কূটনৈতিক আবাসিকের সুবিধা
- সময় কাটানোর পর্যাপ্ত স্থান ও সুপরিচিত ফুড কোর্ট
বারিধারা- সত্যিকারের আবাসিক এলাকার স্বাদ
বারিধারা আবাসিক এলাকা মানেই বিলাসবহুল ও জাঁকজমক জীবনযাপন। সত্যি কথা বলতে এটি থাকার জন্য খুবই ব্যয়বহুল জায়গা। আপনার যদি ভাল বাজেট থাকে এবং আপনি সমস্ত আধুনিক সুবিধায় পরিপুর্ণ জীবনযাপন করতে চান তাহলে এই এলাকা আপনার জন্য।
বারিধারায় পাবেনঃ
- কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা
- শান্ত পরিবেশ
- আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা
- গুলশান ও বনানীতে যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট আলাদা রাস্তা
বনশ্রী- স্বল্প খরচে বিলাসবহুল এলাকার কাছাকাছি থাকার সুযোগ
আপনি যদি স্বল্প বাজেটের মানুষ হন এবং গুলশান-বনানীর কাছে থাকতে চান তবে এটি আপনার জন্য উপযুক্ত এলাকা। বনশ্রী হল এই অঞ্চলের মধ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির বাস করার জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং উপযুক্ত এলাকা ।
বনশ্রীতে আছেঃ
- উন্নত ট্র্যাফিক এবং রাস্তার অবস্থা
- গুলশান-বনানী কাছাকাছি থাকার সুবিধা
- সহজেই শহরের ভিতরে এবং বাইরে যাওয়ার সুবিধা
- প্রতিটি ব্লকে আধুনিক চিকিৎসা-সুবিধা এবং শপিংমল
- আইডিয়াল স্কুল, মাইলস্টোন কলেজ এবং নিকটবর্তী ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
ধানমন্ডি- এখন আর কেবলমাত্র অভিজাতদের জন্য নয়
একসময় বলা হত, কেবল ধনী লোকেরাই ধানমন্ডিতে বাস করে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ধানমন্ডির এই পরিচিতি অনেক বদলে গেছে। এটি ঢাকা শহরের অন্যতম প্রধান এলাকা। বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ কর্পোরেট, শিক্ষা ও চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত।
ধানমন্ডির সুবিধাগুলোঃ
- উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা এখানে সহজেই থাকতে পারেন
- খাবার, সিনেমা, থিয়েটার, গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক সংস্থা, কফি শপ, স্পোর্টস, জিম সবই এক জায়গায় রয়েছে
- সেরা হাসপাতালগুলো সব এখানে অবস্থিত
- শহরের সেরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি এখানে অবস্থিত
- বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস
- রকমারি শপিংয়ের জায়গা
- সাশ্রয়ী মূল্যের এবং ব্যয়বহুল উভয় অ্যাপার্টমেন্ট এখানে পাওয়া যায়
মোহাম্মদপুর- বৈচিত্র্যে ভরপুর একটি এলাকা
মোহাম্মদপুরের প্রাচীন ইতিহাস এবং বিভিন্ন রাস্তার পুরানো নাম আমাদের অনেককেই নস্টালজিক করে তোলে! একটি অনেক বড় এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা একটি জায়গা যেখানে প্রচুর বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যাবে।
ঢাকার খুব কম জায়গাতে এখানকার মত সব ধরনের লোকের সমাহার দেখা যায়। খুব ভোর থেকেই স্কুল ও অফিসগামী মানুষজনের ব্যস্ততায় আসাদ গেট, তাজমহল রোড এবং ইকবাল রোডের রাস্তাগুলি মুখর হয়ে ওঠে।
মানুষ আর রিকশার ভীড় থাকার পরও এই অঞ্চলটি সবাইকে খুব টানে। মোহাম্মদপুরে যারাই বসবাস করে তারা প্রত্যেকেই যেন এলাকাটির প্রতি এক অদ্ভুত মায়ায় পড়ে যায়।
রাস্তাগুলির ঐতিহাসিক নামগুলি আমাদের মনের রাজ্যে ভিন্ন রকম আলোড়ন তুলে এলাকাটিকে অনন্য করে তুলেছে। এখানে একদম নতুন নতুন আউটলেট এবং জনপ্রিয় রেস্তোঁরার দেখা পাওয়া যাবে। এছাড়াও এখানে বিখ্যাত স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এবং ঐতিহ্যবাহী মসজিদ রয়েছে।
মিরপুর- স্বল্প বাজেটের লোকদের জন্য উপযুক্ত এলাকা
আপনি যদি একটি শান্ত ও স্বাস্থ্যকর জায়গার খোঁজে থাকেন তাহলে মিরপুর আপনার জন্য না। তবে আপনি যদি হন অবিবাহিত বা শিক্ষার্থী এবং কম খরচের বাসায় থাকার চিন্তা করেন তাহলে এটি আপনার জন্য উপযুক্ত। মিরপুর মূলত স্বল্প বাজেটের লোকদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান।
মিরপুরের কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য হল:
- শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং জাতীয় চিড়িয়াখানা
- মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্স
- বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং হাসপাতাল
- বিভিন্ন ধরণের ফুড কোর্ট
- এমআইএসটি, বিইউপি, এসওএস হারমান জিমিনার কলেজ, মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত
- সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন ধরণের অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া যায়
যে কোনও আবাসিক এলাকা বেছে নেয়ার আগে সবসময় যে তিনটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত তা হল, বাজেট, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ। ঢাকায় থাকার জন্য সবচেয়ে ভাল আবাসিক অঞ্চল বেছে নেওয়ার আগে এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
আপনার জীবনযাপন সুখময় হোক এই প্রত্যাশায়!
আরও তথ্যের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন বা আমাদের কল করুন 09612 008800